আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
আজ ৮ মার্চ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস (আদি নাম আন্তর্জাতিক কর্মজীবি নারী দিবস)। বিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তে নারীদিবস উদযাপনের প্রধান লক্ষ্য ভিন্ন ভিন্ন হয়। কোথাও উদযাপনের, কোথাও বা প্রতিবাদের। ১৯৭৫ সাল থেকে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এবারের নারী দিবসের মূল প্রতিপাদ্য “আমি প্রজন্মের সমতা; নারী অধিকারের প্রতি সচেতনতা”।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ইতিহাসঃ-
১৮৫৭ সালে মজুরি বৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, বৈরি বা অমানবিক কর্মপরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে একজোট হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছিল সুতা কারখানার নারী শ্রমিকরা। সেই মিছিলে কারখানার মালিক ও সরকারের লেঠেল বাহিনী দমন–পীড়ন চালায় এবং বহু নারীকে গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হয়।
১৯০৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্তিক নেত্রী ক্লারা জেতকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্ত র্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ; জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন।
তিন বছর পরে ১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় ‘নারী–শ্রমিক ইউনিয়ন‘। প্রায় অর্ধশতাব্দী পর ১৯০৮ সালে পোশাক ও বস্ত্র শিল্পের কারখানায় প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করে। এরপর বিভিন্ন সময়ে ৮ মার্চ তারিখে সংঘটিত উল্লেখযোগ্য আরো ঘটনার ধারাবাহিকতায় ১৯১০ সালে এই দিনে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্তিক নারী সম্মেলন। ১৭ টি দেশ থেকে প্রায় ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে অংশ নিয়েছিলেন। এ সম্মেলনেই প্রথমবারের মত ক্লারা প্রতি বছরের ৮ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস‘ হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয় ১৯১১ সাল থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতান্ত্রীকরা। ১৯১১ সালের ১৯ শে মার্চ প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ভাবে নারী দিবস পালন করা হয়। ১৯১৪ সাল থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ নারী দিবস হিসেবে পালিত হতে লাগল নিয়মিতভাবে। ১৯১১ থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে মার্চের বিভিন্ন দিনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়। ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ এই দিনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এর দুই বছর পর ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ দিনটি আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এরপর থেকে সারা পৃথিবী জুড়ে আন্তর্জতিক নারী দিবস পালিত হচ্ছে নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুর্নব্যক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে।
স্বাধীনতা লাভের পূর্ব থেকেই বাংলাদেশেও এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
নারী দিবসের রঙঃ-
নারী দিবসের রঙ নির্ধারিত হয়েছে বেগুনি এবং সাদা, যা নারীর প্রতিক। বেগুনি রঙ র্নিদেশ করে সুবিচার ও মর্যাদা, যা দৃঢ়ভাবে নারীর সমতায়ন।
বিশ্বের অনেক দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারী ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়।
No comments