আজ জাতীয় পতাকা দিবস ।
আজ ২ রা মার্চ,বাংলাদেশ জাতীয় পতাকা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পূর্ব পাকিস্তানের ভূখন্ডে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা। সেদিন এক ছাত্র সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে বটতলায় স্বাধীন বাংলার স্বপ্নের লাল-সবুজ পতাকাটি উত্তোলন করেন তৎকালীন ডাকসু সভাপতি আ স ম আব্দুর রব। সবুজ জমিনের ওপর লাল বৃত্তের মাঝখানে সোনালি রঙয়ের বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত ছিল পতাকাটিতে।
১৯৭০ সালের
৭ জুন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তনের রাজধানী ঢাকার পল্টন ময়দানে অনুষ্টিত ছাত্রদের এক সামরিক
কুচকাওয়াজে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের অংশ গ্রহণের কথা ছিল।এই লক্ষ্যে ছাত্রদের
নিয়ে ‘জয় বাংলাবাহিনী‘মতান্তরে ‘১৫ – ফেব্রুয়ারি বাহিনী‘গঠন করা হয়। সেসময় ছাত্র বাহিনীরা
একটি পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়।
১৯৭০ সালের
৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহ্রুল হক হলের ( তৎকালীন ইকবাল হল ) ১০৮ নং কক্ষে ছাত্রলীগ নেতা, আ স ম আব্দুর
রব, শাজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ আহমেদ, মার্শালা মনিরুল ইসলাম, ছাত্রলীগ নেতা স্বপন কুমার
চৌধুরী, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনু ও ছাত্রনেতা
ইউসুফ সালাউদ্দিন আহমেদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ ) এর ছাত্রলীগ
নেতা নজরুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা
শিবনারায়ণ দাশ পতাকার পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক করেন। সভায় কাজী আরেফের প্রাথমিক প্রস্তাবনার
ওপর ভিত্তি করে সবার আলোচনা শেষে সবুজ জমিনের ওপর লাল বৃত্তের মাঝে সোনালি রঙের বাংলার
মানচিত্র খচিত পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়।
১৯৭০ সালের
৬ জুন রাতে কামরুল আলম খান ( খসরু ) ঢাকা নিউ মার্কেটের এক বিহারি দর্জির দোকান থেকে
বড় এক টুকরা সবুজ কাপড়ের মাঝে লাল একটি বৃত্ত সেলাই করে আনেন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের
তিতুমীর হলে ( তৎকালীন কায়েদে আযম হল )। ইউসুফ সালাউদ্দিন আহমেদ ও হাসানুল হক ইনু তিতুমীর
হলের ৩১২ নং কক্ষের এনামুল হকের কাছ থেকে মানচিত্রের বই নিয়ে টেসিং পেপারে আঁকেন পূর্ব
পাকিস্তানের মানচিত্র। ছাত্রনেতা শিবনারায়ণ দাশ তার নিপুন হাতে লাল বৃত্তের মাঝে বাংলার
মানচিত্র এঁকে পতাকাটিকে চূড়ান্ত রুপ দেন। নিরাপত্তার জন্য পতাকাটি লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। ১৯৭১
সালের ২ রা মার্চ পতাকাটি উত্তোলন করা হয়।
তৎকালীন ডাকসু
নেতাদের উদ্যোগে ২ রা মার্চ পাকিস্তানি শাসকগোষ্টীর অন্যায়, অত্যাচার, অবিচারের বিরুদ্ধে
সাড়া দিয়েছিলেন আমজনতা। সেদিনের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়েই বাঙ্গালী ছাত্র-জনতা স্বাধীনতা
সংগ্রামের অগ্নিমন্ত্রে উজ্জীবিত হয় এবং স্বাধীনতা অর্জনের পথে যাত্রা শুরু করে। দীর্ঘ
৯ মাসের বহু ত্যাগ, রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। ১৯৭২ সালের
১২ ই জানুয়ারী, শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার বাংলাদেশের পতাকা থেকে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে
পতাকার মাপ, রং ও তার ব্যাখ্যা সম্বলিত একটি প্রতিবেদন দিতে বলে পটুয়া কামরুল হাসানকে। পতাকার
উভয় পাশে সঠিকভাবে মানচিত্রটি ফুটিয়ে তোলার অসুবিধার কারণে পতাকা থেকে মানচিত্রটি সরিয়ে
ফেলা হয়। পটুয়া কামরুল হাসানের পরিমার্জিত রূপটি বর্তমান বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। সবুজ
আয়তক্ষেত্রের মধ্যে লাল বৃত্ত। সবুজ রং বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি ও তারুণ্যের প্রতীক। বৃত্তের
লাল রং উদীয়মান সূর্য ও স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্নোৎসর্গকারীদের রক্তের প্রতীক। ১৭ ই জানুয়ারী
১৯৭২ সাল, সরকারিভাবে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার এই রূপটি গৃহীত হয়। পতাকা দিবস সাধারণত
জাতীয় সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকে। কখনো কখনো রাষ্ট প্রধানের আদেশানুসারেও পালন করা হয়। যেকোনো
দিবসে জাতীয় পতাকা কোথায় এবং কিভাবে উত্তোলন করা হবে তার সুস্পষ্ট নির্দেশ থাকে। যেমন-
অর্ধনমিত না পূর্ণদৈর্ঘ্য।
No comments