Road accident (ভয়ংকর সড়ক দুর্ঘটনা) ।
সড়ক কবে নিরাপদ হবে ???
দিন
দিন বেড়েই চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা। প্রতিদিন
সংবাদপত্রের পাতা খুললেই প্রতিনিয়ত চোখে
পড়ে সড়ক দুর্ঘটনার খবর।বর্তমান
দিনে ঘর থেকে বের
হলেই প্রত্যেক মানুষকে সড়ক দুর্ঘটনা নামক
আতংক তাড়া করে বেড়ায়। প্রতিদিন
দেশের কোন না কোন
অঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেই
থাকে। এতে অসময়ে প্রাণ হারায় অগণিত মানুষ। বর্তমান সময়ে সড়ক দুর্ঘটনা
একটি মহামারি। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে যানবাহনের
সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। তাই প্রতিনিয়তই
ঘটে চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনার
হারে বিশ্বের প্রথম সারিতে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১১ হাজার পাকা
রাস্তা আছে। আর এই রাস্তায় প্রতিনিয়ত
ঘটে চলেছে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা।বাংলাদেশে প্রতি ১
লাখ মানুষের মধ্যে ১২ দশমিক ৬
জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ
হারায়।
বাংলাদেশ
হেলথ ইনজুরি সার্ভ-২০১৬ (বিএইচআইএস) তারা বলেছেন, প্রতিবছর
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩
হাজার ১৬৬ জন নিহত
হন এবং গড়ে প্রতিদিন
৬৪ জন নিহত হন। এর
মধ্যে ১৪ জন শিশু
ও ৫০ জন প্রাপ্ত
বয়স্ক।
একটি
সড়ক দুর্ঘটনায় শুধু যে মানুষের
প্রাণহানি হয় তাই না
এর ক্ষয়-ক্ষতিও ব্যাপক। সড়ক
দুর্ঘটনা পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে
করে তোলে দুর্বিষহ। হঠাৎ করে
বিপর্যয় নেমে আসে একটি
পরিবারে। সেই শোক গোটা পরিবার
ও আত্মীয়-স্বজনদের সারা জীবন বয়ে
বেড়াতে হয়। অনেক সময় সড়ক দুর্ঘটনায়
সমাজ ও দেশ হারায়
তার কৃতি সন্তানদের। এ দুর্ঘটনা
অনেককে চিরদিনের জন্য পঙ্গু করে
দেয়। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় যে
ক্ষতি হয় তার আর্থিক
পরিমাণ বছরে প্রায় ৫
হাজার কোটি টাকা যা
জিডিপির দুই ভাগ।
সড়ক
দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান:-
সরকারি
হিসাবে ১৯৯৯ থেকে ২০১০
সাল পর্যন্ত এক যুগে সারা
দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা
গেছে ৩৮ হাজার লোক
এবং আহত হয়েছে ৩৫
হাজার। ২০১১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায়
মারা যান ২ হাজার
১৪০ জন এবং সড়ক
দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে ২ হাজার ২৪১
টি। ২০১৬ সালে নিহত হন
৬ হাজার ৫৫ জন, আহত
হন ১৫ হাজার ৯১৪
জন এবং দুর্ঘটনা সংঘটিত
হয়েছে ৪ হাজার ৩১২
টি। ২০১৭ সালে নিহত হন
৭ হাজার ৩৯৭ জন, আহত
হন ১৬ হাজার ১৯৩
জন এবং দুর্ঘটনা সংঘটিত
হয়েছে ৪ হাজার ৯৭৯
টি। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে হতাহতের
সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি দুর্ঘটনার পরিমাণ বেড়েছে ১৫.৫ শতাংশ।
আইন
প্রয়োগের দুর্বলতা সড়ক দুর্ঘটনা না
কমার একটি বড় কারণ। সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে বিশৃঙ্খলা। চালক-মালিকদের বেপরোয়া মনোভাব এই সেক্টরকে দিন
দিন অনিরাপদ করে তুলেছে। সরকার সড়ক
নিরাপত্তায় জনবান্ধব যেকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গেলে তারা
বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এমন পরিস্থিতিতে
সড়ক নিরাপত্তা আজ মারাত্মক হুমকির
মুখে। জনসচেতনতা এবং প্রয়োজনীয় সরকারি
বেসরকারি পদক্ষেপই এই মহামারিকে রুখতে
পারে।
সড়ক
দুর্ঘটনা ঘটার কারণসমূহ:-
ট্রাফিক
সিগন্যাল অমান্য করা, অদক্ষ ও
লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগ, বেপরোয়া
গতিতে গাড়ি চালানো, বিপজ্জনক
ওভারটেকিং, রাস্তাঘাটের নির্মাণ ত্রুটি , ফিটনেসবিহীন যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের অসর্তকতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল/হেডফোন ব্যবহার, মাদকসেবন করে যানবাহন চালানো, অপ্রশস্থ রাস্তা, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা, অননুমোদিত
স্থানে গাড়ি পার্কিং করা, বিধি লঙ্ঘন করে
ওভারলোডিং, দীর্ঘক্ষণ বিরামহীন ভাবে গাড়ি চালানো, সড়ক নিরাপত্তা রোধের
আইন অমান্য করা, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা, সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেলসহ
তিন চাকার যানবাহন চলাচল বৃদ্ধি।
সড়ক
দুর্ঘটনা প্রতিরোধের উপায় সমূহ:-
পেশাদার
লাইসেন্স প্রদানে স্বচ্ছতা, পরিবহণ খাতে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে
সর্বোচ্চ আইন প্রণয়ন, গাড়ির
ফিটনেস পরীক্ষা করে গাড়ি রাস্তায়
বের করা, গাড়িতে যান্ত্রিক
ত্রুটি আছে কিংবা ফিটনেসবিহীন
গাড়ি রাস্তায় বের না করা, বেপরোয়া গতি ও ওভারটেকিং
নিষিদ্ধকরণ, গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা বেঁধে দেওয়া, প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকায় স্পিড ব্রেকার দিতে হবে, ট্রাফিক
আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং আইন লঙ্ঘনকারীদের
কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, লাইসেন্স
প্রদানে জালিয়াতি প্রতিরোধ করতে হবে এবং
লাইসেন্স প্রদানের আগে চালকের দক্ষতা
ও যোগ্যতা পরীক্ষা করা, ত্রুটিপূর্ণ সড়কগুলো
দ্রুত মেরামত করা, একজন চালক
সর্বোচ্চ ৫
দিন একটানা গাড়ি চালানোর পর
২ দিন বিশ্রাম নেওয়া
বাধ্যতামূলক করা এবং গাড়ি
চালানোর আগে চালক মাদকাসক্ত
না থাকে সে ব্যবস্থা
গ্রহণ করা, পথচারীদের ট্রাফিক
আইন মেনে সর্তকভাবে চলাচল
করা, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন
করা থেকে বিরত থাকা, মহাসড়কের পাশে হাট-বাজার
ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
করা এবং পথচারীদের জন্য
পর্যাপ্ত পরিমাণ ফুটপাত এর ব্যবস্থা করা, প্রতিমাসে মহাসড়কে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে যানবাহনের ত্রুটি-বিচ্যুতি পরীক্ষা করা।
উপরোক্ত
প্রতিকারগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারি-বেসরকারি একটি সংস্থা গঠন
করা উচিত যারা এই
আইনগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা বা না
হলে এর জবাবদিহিতার ব্যবস্থা
করা।
আমাদের
সড়ক-মহাসড়কের সর্বত্রই চলছে বিশৃঙ্খলার মহোৎসব। এতে
প্রাণ হারাচ্ছে একের পর এক। সড়ক
দুর্ঘটনায় প্রাণহানি জঙ্গি তৎপরতার মতোই ভয়াবহ। সড়ক নিরাপত্তার
জন্য সময়োপযোগী আইন প্রণয়ন এর
ব্যবস্থা গ্রহণ করা খুবই জরুরি। সরকারি
ও বেসরকারিভাবে সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধের
জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হলেও তা
বাস্তবে কার্যকর করা যাচ্ছেনা।
আশার
কথা হল, আগামী ২০২০
সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে
নামিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে
সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় গঠন করা হয়েছে
"ন্যাশনাল রোড সেফটি স্ট্র্যাটেজিক
অ্যাকশন প্ল্যান"।
সড়ক
দুর্ঘটনা কমাতে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আসুন আমরা
সবাই মিলে এক হয়ে
নিরাপদ সড়ক গড়ার লক্ষ্যে
কাজ করি। আমাদের সবার মুখে একটাই
স্লোগান হোক
No comments