শীতকালে চুল ও ত্বকের যত্ন ।
চুল ও ত্বকের যত্ন
শীতকাল আর্দ্রতাহীন,
মলিন ও শুষ্ক । এ সময় অনেকের ত্বক ও চুল শুষ্ক, রুক্ষ এবং বির্বণ হয়ে যায় । শীতকাল
মানেই বাতাসে আর্দ্রতা কম আর প্রচুর ধুলাবালি । ফলে চুলে দ্রুত ময়লা জমে এবং আর্দ্রতা
হারিয়ে চুল হয় রুক্ষ । খুশকির সাথে সমানতালে বাড়ে চুল পড়ার হার এবং চুলের ডগা ফেটে
যায় । এজন্য শীতকালে মাথার ত্বক ও চুলের যত্ন নেওয়া খুবই প্রয়োজন ।
চুলের যত্নঃ-
-
· অনেকেই মনে করে প্রতিদিন শ্যাম্পু ব্যবহার করলে চুলের ক্ষতি হয় । কিন্তু শীতকালে নিয়মিত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে । এজন্য ভালো ব্র্যন্ডের শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত । কন্ডিশনার কম ব্যবহার করাই ভালো । যদি কন্ডিশনার ব্যবহার করতেই চান, তাহলে প্রতিদিন ব্যবহার না করে দুই-এক দিন পর পর ব্যবহার করুন ।
-
· শীতকালে প্রায় সবাই গোসলের জন্য গরম পানি ব্যবহার করেন । মাথায় গরম পানি ব্যবহার করা উচিত নয়, তবে ঈষদুষ্ণ পানি ব্যবহার করে চুল পরিষ্কার করতে পারেন ।
-
· গোসলের পরে অনেকেই চুলে জেল অথবা ক্রিম ব্যবহার করে থাকে । এসব রাসায়নিক পণ্য ব্যবহারে চুলকে বাহ্যিক ভাবে সুন্দর দেখালেও, এইসব পণ্য চুলের অনেক ক্ষতি করে থাকে । তাই চুলে রাসায়নিক পণ্যের ব্যবহার কমিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে চুলের যত্ন নিন । সপ্তাহে অন্তত একবার চুলের প্রাকৃতিক যন্ত নিন ।
- চুলের প্রাকৃতিক যত্নে তেলের কোনো বিকল্প নেই । গোসলের আগে কমপক্ষে ১৫/২০ মিনিট চুলে তেল মেখে রেখে শ্যাম্পু করতে হবে । এতে মাথার ত্বক সুস্থ থাকে । অনেকেই তেল গরম করে চুলে দেয়,এতে চুল পড়ে অনেক বেশি । তাই তেল গরম করে ব্যবহার না করাই ভালো ।
-
· চুলে টকদই মেখে কিছুক্ষণ রেখে শ্যাম্পু করুন, প্রাকৃতিক ভাবেই আপনার চুলে আলাদা চমক ও মসৃণতা চলে আসবে ।
-
· কন্ডিশনার ব্যবহার না করে শুকনো আমলকী ও শিকাকাই রাতে ভিজিয়ে সকালে দুটোকে একসঙ্গে বেটে ক্যাস্টর অয়েল,তিলের তেল,টকদই মিশিয়ে ৩০ মিনিট চুলে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন।তারপর নিজেই দেখুন প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের যাদু ।
-
· সম্ভব হলে মাসে অন্তত একবার চুলে প্রোটিন ট্রিটমেন্ট নিতে পারেন ।এতে খুশকিসহ চুলের সব ধরণের সমস্যা দূর হয়ে যায় ।
শীতকালে সবার
ত্বকেই কমবেশি সমস্যা হয় । বাতাসে আর্দ্রতা কমে যাওয়ার ফলে ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায়
। ত্বক রুক্ষ, খসখসে, লাল হয়ে ফেটে যাওয়া, খুশকি,র্যাশ,কারও কারও ত্বকে কালচে ছোপ
পড়া সহ আরো অনেক সমস্যা দেখা যায়। তাই শীতকালে ত্বকের যত্নে বেশি মনোযোগ দিতে হবে।
-
· ত্বকের যত্নে ভালভাবে পরিষ্কার করা বা ক্লেনজিংয়ের বিকল্প নেই । প্রতিদিন কয়েকবার পরিষ্কার পানিতে মুখ ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে ।কর্মব্যস্ত দিন শেষে বাসায় ফিরে ভালো করে পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুতে হবে ।
-
· শীতে যেহেতু ত্বকে ময়েশ্চারের পরিমাণ কমে যায় তাই ময়েশ্চার বা আর্দ্রতা বাড়ানোর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে ।যাঁদের ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক,তাঁরা ঘন ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহার করবেন ।যাঁদের তৈলাক্ত ত্বক তাঁরাও কমবেশি শুষ্কতা অনুভব করেন । তাঁরা প্রতিদিন স্বাভাবিক লোশন ব্যবহার করলেই হবে ।
-
· গোলাপের পাপড়ি ও পাকা খেজুর দুধে ভিজিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর বেটে পেষ্ট করে মুখে মাখুন । ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন । তারপর নিজেই দেখুন প্রাকৃতিক উপাদানের যাদু ।
-
· পাকা কমলালেবুর রসের সাথে দুধ ও ময়দা মিশিয়ে মুখ ধুতে পারেন । এতে ত্বক পরিষ্কার ও নরম হবে ।
-
· যাঁরা গরম পানি দিয়ে মুখ ধোন,তাঁরা গরম পানির পর পরই ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুবেন।
-
· যাঁদের ত্বকে খুশকি,র্যাশ হয় তাঁরা মাসে একবার পার্লারে গিয়ে সিলভার ফেসিয়াল করাতে পারেন।
শীতে শুধু মুখ
না হাত পায়ের অবস্থাও নাজেহাল হয়ে যায় । হাত পায়ের ত্বক রুক্ষ,সাদা হয়ে যাওয়া,পায়ের
গোড়ালি ফাটা সহ নানা ধরণের সমস্যা দেখা দেয় । তাই শীতকালে হাত পায়ের নিয়মিত ও বিশেষ
যত্ন নিতে হবে ।
-
· এসময় অনেকের হাতের কনুইয়ে কড়া পড়তে দেখা যায়,সে ক্ষেত্রে প্রতিদিন ঘুমানোর আগে গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। অথবা লেবুতে চিনি ছড়িয়ে স্ক্রাব করতে পারেন ।এছাড়া রসুন পেষ্ট করে রস লাগিয়ে রাখলেও দাগ কমে যায় ।
-
· শীতে প্রায় সকলেরই পা ফেটে খসখসে হয়ে যায়,অতিরিক্ত ওজনের কারণেও পা ফাটে,খালি পায়ে হাঁটলেও পা ফাটে। তাই ঘরেও আরামদায়ক পাতলা স্যান্ডেল ব্যাবহার করুণ । গোড়ালির জন্য ঝামা পাথর বা চিনামাটির ঘষা পাথর ব্যবহার না করে পিউমিস স্টোন ব্যবহার করুণ ।
-
· প্রতিদিন নিয়মিত হাত পায়ে লোশন ব্যবহার করতে হবে । লোশনের বদলে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন ।
ত্বক ও চুলের
যত্নে ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার ও পানি পান করতে হবে । এছাড়াও প্রচুর পরিমাণ
মৌসুমি শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে ।
No comments