*** "বসন্ত উৎসব" বাঙালীর একটি ঐতিহাসিক উৎসব।
"
বসন্ত উৎসব " কুয়াশার চাদর গায়ে আসে শীতকাল ।প্রকৃতি হয়ে উঠে রুক্ষ ,শুষ্ক ।গাছের পাতা ঝরে পরে যায় ।প্রকৃতি তার সমস্ত রুপ হারিয়ে মলিন হয়ে যায় ।এই মলিন হয়ে যাওয়া প্রকৃতিকে নতুন রুপে সাজাতে রুপের সমারহ নিয়ে আসে বসন্তকাল ।শীতের আবেশ কাটিয়ে প্রকৃতি নতুন রুপে সেজে উঠে ।প্রকৃতিতে অপরূপ রমণীয় শোভা বিস্তার করে আর্বিভূত হয় বসন্ত ।শীতের পাতা ঝরা গাছের ডালে উঁকি দেয় নতুন সবুজ কচি পাতা , পলাশ-শিমুল- কৃষ্ণচূড়া রঙের মেলা বসে প্রকৃতিতে,দখিনা হাওয়া বয় এবং কোকিল এর কুহু কুহু কুহুতান জানান দেয় বসন্ত এসে গেছে ।তাই কোকিলকে বলা হয় বসন্তের প্রতীক । বাংলাদেশের ষড়ঋতু মধ্যে বসন্ত হল সবশেষ ঋতু ।বসন্তকে ঋতু রাজও বলা হয় ।ফাল্গুন ও চৈএ এই দুইমাস বসন্তকাল ।ফাল্গুনের হাত ধরেই বসন্তের আগমন ।পহেলা পাল্গুনে বসন্ত উৎসব পালন করা হয় ।পহেলা ফাল্গুন হল বিপুল ধন- ভান্ডার ও সৌর্ন্দযের অধিকার ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করার দিন । এই দিনে তরুণীরা বাসন্তী বা হলুদ রঙের শাড়ী পড়ে, চুলের খোঁপায় ফুল ও শরীরে ফুলের অলংকার পড়ে নিজেকেও প্রকৃতির মতো সাজিয়ে প্রিয় মানুষটির হাত ধরে বেরিয়ে পড়ে প্রকৃতির সৌর্ন্দয উপভোগ করতে । চারুকলার তরুণ - তরুণীরা একে অন্যকে আবির বা রঙ মাখিয়ে বসন্তকে বরণ করে নেয় ।মেয়েরা বাসন্তী বা হলুদ রঙের শাড়ী পড়ে,চুলের খোঁপায় ফুল ও শরীরে ফুলের অলংকার পড়ে এবং ছেলেরা পাজামা পাঞ্জাবী অথবা ধুতি পড়ে ।ষাট দশক থেকেই পহেলা ফাল্গুনে হলুদ বা বাসন্তী রঙের শাড়ী পরার রীতি শুরু হয় ।ধীরে ধীরে কমলা, লাল, ও সবুজ রঙও প্রাধান্য পাচ্ছে । নানা রঙের ফুলে নিজেকে সাজিয়ে তোলে প্রকৃতি ।প্রকৃতির মতো মানুষের মনেও বসন্তের হাওয়া দোল খায় ।তাইতো মন গেয়ে ওঠে _ আহা আজি এ বসন্তে , কত ফুল ফোটে , কত বাঁশি বাজে , কত পাখি গায় , আহা আজি এ বসন্তে । পহেলা ফাল্গুনে চারুকলার তরুণ - তরুণীরা বসন্ত শোভাযাত্রা বের করে ।এই দিনে শাহবাগ চত্বর ,টি এস সি মোড় , রমনা বটমূল ও ধান- মন্ডি লেকের পাশে তরুণ - তরুণীরা বসন্ত উৎসব উদযাপন করে ।এছাড়াও বাংলা একাডেমি প্রঙ্গন , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো অনেক জায়গায় বসন্ত উৎসব পালন করা হয় । প্রতিবছর পহেলা ফাল্গুনে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ বসন্ত উৎসবের আয়োজন করে থাকে ।চারুকলার বকুলতলা ও ধান - মন্ডির রবীন্দ্র সরোবরের উন্মুক্ত মঞ্চে এই উৎসবের আয়োজন করা হয় । বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব পানল করে আসছে । বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে পহেলা ফাল্গুন ও গ্রেগরীয় পঞ্জিকা অনুসারে ১৩ - ই ফ্রেবুয়ারী বসন্ত উৎসব পালন করা হয় ।এই দিন বসন্তকে বরণ করে নেয় বাঙ্গালীরা । ১৯০৭ সালে বিশ্বকবি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট ছেলে শমীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঋতুরঙ্গ উৎসব শুরু করেন ।এই ঋতুরঙ্গ উৎসবই বর্তমানের বসন্ত উৎসব ।শান্তিনিকেতনে বিশেষ নৃত্যগীতের মাধ্যমে এই উৎসব পালন করা হত । বঙ্গাব্দ ১৪০১ সালে প্রথম বাংলাদেশে বসন্ত উৎসব পালন করার রীতি চালু হয় । ধীরে ধীরে বসন্ত উৎসব জাতীয় উৎসবে পরিণত হয় । সবশেষে মন বলে উঠ - " ফুল ফুটুক নাইবা ফুটুক আজ বসন্ত "
No comments