চীনে নতুন আতঙ্ক করোনা ভাইরাস।
বিশ্ব জুড়ে নতুন আতঙ্ক চীনের করোনা ভাইরাস। বর্তমানে এই আতঙ্ক চীনকে গ্রাস করচ্ছে, বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বই তা নিয়ে শঙ্কিত। করোনা ভাইরাসের আরেক নাম ২০১৯-এনসিওভি। করোনা ভাইরাস এক ধরণের সাধারণ ভাইরাস। এই ভাইরাস নাক, সাইনাস বা উপরের গলায় সংক্রমণ ঘটায়। করোনা ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়। স্তন্যপায়ী প্রাণী ও পাখিরা এর দ্বারা বেশী আক্রান্ত হয়।
World Health Organization (WHO) এর তথ্য মতে করোনা ভাইরাসের
অনেক গুলো প্রজাতি আছে। বেশীর ভাগ করোনা ভাইরাস বিপদজনক নয়। এর মধ্যে সাতটি মানুষের
দেহে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। করোনা ভাইরাস চীনসহ ১২ টি দেশে সংক্রমণ হয়েছে। 
করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি:-
                             মধ্যচীনের উহান প্রদেশে
সর্ব প্রথম করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি ঘটে।
বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছে চীনের উহান বাজার থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, উহানে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সি ফুড বাজারের দোকানদার অথবা ক্রেতা
ছিলেন। বাজারটিতে অবৈধভাবে বন্য প্রাণী বেচাকেনা হতো। ওই বাজারে সামুদ্রিক মাছ, মুরগী,
ভেড়া, শুকর, শিয়াল, ইঁদুর, বাদুড়, সাপ, খরগোশসহ ১১০ প্রজাতির বিষাক্ত বন্যপ্রাণী ও
পোকামাকড় বিক্রি করা হত।
World Health Organization (WHO) তথ্য অনুযায়ী –
·        
গবেষকরা করোনা ভাইরাসকে জুনেটিক অর্থাৎ পশুপাখির
দেহ থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছে বলে ধারণা করছে।
·        
আক্রান্ত প্রাণী থেকে মানুষের দেহে প্রবেশ করা।
·        
একজন আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকেও অন্য ব্যক্তির
শরীরে এই ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে।
·        
আক্রান্ত মানুষের সঙ্গে হাত মিলালেও এই ভাইরাস
ছড়ায়।
·        
আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির সংর্স্পশে এলেও
এই ভাইরাস চরায়।
করোনা ভাইরাস ও  ভয়াবহতা:-
                              করোনা ভাইরাস কতটা
মারাত্নক সেটা এখনও পরিষ্কার হয়নি। তবে এখন পর্যন্ত আক্রান্তদের ২ শতাংশ রোগী মারা
গেছে। এই ভাইরাস পূর্বের মরণঘাতী ভাইরাসদের মতো ভয়াবহ আকার এখনও ধারণ করেনি। তাই
এই ভাইরাস ঠিক কতটা ভয়ংকর তা এখনও স্পষ্ট নয়। গবেষকরা বলছেন, চীনের উহান বাজারের কোন
প্রাণী এই ভাইরাস এর উৎস। এসব প্রাণী থেকে ভাইরাসটি প্রথমে মানব দেহে প্রবেশ করে,
তারপর এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। গবেষকদের ধারণা, ভাইরাসটি মানুষের
দেহকষের ভেতরে ‘ মিউটেট ’ অর্থাৎ গঠন পরিবর্তন করে নতুন রুপ ধারণ করছে এবং সংখ্যা বৃদ্ধি
করছে। এই ভাইরাসটি মানব দেহে প্রবেশ করে সুপ্ত অবস্থায় থাকে তাই সহজে এই ভাইরাসের
অস্থিত্ত বুঝা যায় না। করোনা ভাইরাস সাধারণ ফ্লু বা ঠাণ্ডা লাগার মতোই হাঁচি-কাশির
মাধ্যমে প্রথমে ফুসফুসে আক্রমণ করে। পরে আস্তে আস্তে মারাত্নক আকার ধারণ করে। এই
ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের অঙ্গ বিকল হয়ে যায়। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যু
নিশ্চিত। 
বর্তমানে চীনের অবস্থা:-
                          চীনে করোনা ভাইরাসের অবস্থা
ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রায় ২০০০ জনেরও বেশী মানুষ এই ভাইরাসে আক্রন্ত হয়েছে। এই
পর্যন্ত ৫৭ জনের বেশী রোগীর মৃত্যু হয়েছে। করোনা ভাইরাস দ্রুত ছড়ায়, তাই ডাক্তাররা
এই ভাইরাসকে Super Speeder নামে আখ্যায়িত করেছে। চীনে দিন দিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত
রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
তাই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য চীনা সরকার মাত্র
৬ দিনে ১০০০ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন।
চায়নার যেসব শহরে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে ওই সব শহরের মানুষদের
গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ গৃহবন্দী অবস্থায় আছে। চীনের
সকল স্কুল/কলেজ, সরকারি / বেসরকারি অফিস আদালত অনির্দিষ্ট কালের জন্য ছুটি ঘোষণা কেরেছে
চীনা সরকার। সেখানকার গণপরিবহণ গুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
উপসর্গ:-
          করোনা ভাইরাস
মানব দেহে প্রবেশ করার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় ৫ দিন লাগে। প্রথমে প্রচন্ড
জ্বর, এরপর শুকনো কাশি দেখা দেয়। এক সপ্তাহের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।  পেটে ব্যথা, নিউমোনিয়া
ও অঙ্গ বিকল হয়ে যায়। তখন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। প্রতি চার জনে একজনের
অবস্থা মারাত্নক আকার ধারণ করে।
প্রতিকার:-
       করোনা ভাইরাস
নতুন হওয়াতে এর কোন প্রতিষেধক বা টিকা আবিষ্কার হয়নি। এই ভাইরাসে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক
কাজ করে না। গবেষণায় দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত যেসব রোগী মারা গেছে তারা শারীরিক ও মানসিক
ভাবে দুর্বল ছিল এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ছিল। তাই কারো করোনা ভাইরাস হলে তাকে
শারীরিক ও মানসিক ভাবে শক্ত থাকতে হবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। 
এছাড়া–
·        
সতকর্তার সাথে চলা।
·        
অসুস্থ কারো সংর্স্পশে না যাওয়া।
·        
বার বার সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়া।
·        
হাঁচি-কাশির সময় রুমাল ব্যবহার করা।
·        
ঠাণ্ডা বা ফ্লু আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে দূরে
থাকা।
·        
নোংরা হাতে চোখ-মুখ র্স্পশ না করা।
·        
অসুস্থ ব্যক্তির সাথে হাত মিলানো, টাওয়াল,মগ,চামচ
 বা অন্য কোন ব্যবহৃত জিনিস ব্যবহার না করা।
·        
সংক্রমিত পশুপাখি থেকে দূরে থাকা।
·        
ডিম, মাংস ভালোভাবে সিদ্ধ করে রান্না করা এবং
ফলমূল ধুয়ে খাওয়া।
·        
কোলাহলপূর্ণ স্থান যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা।
·        
বাহিরে যাওয়ার সময় সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার
করা।
·        
আক্রান্ত দেশ ভ্রমণে সতর্কতা অবলম্বন করা।
·        
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা।
·        
বাসা বাড়ী,অফিস পরিষ্কার রাখা।
 

 
 
 
 
No comments